বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন

আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ” দিবসে নিহতদের স্বরণ করলো জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন

আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ” দিবসে নিহতদের স্বরণ করলো জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন

হাকিকুল ইসলাম খোকন : গত ৯ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেনোসাইডে নিহতদের স্বরণ ও শ্রদ্ধা জানালো জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ প্রদীপ রঞ্জন কর এবং সঞ্চালক ছিলেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মনজুর চৌধুরী ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা ও মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় । অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন লণ্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী গৌরী চৌধূরী। শহীদদের স্মরণে কবিতা আবৃতি করেন- গোপন সাহা ও ক্লারা রোজারিও।
এই সভা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীর ক্রমাগত আস্ফালন ও হুমকির মধ্যেই কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- নিউইয়কস্থ বাংলাদেশ কনস্যাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ মনোয়ার হোসেন, সিলেট কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল আউয়াল, জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সেক্রেটারী (প্রেস) নূরে এলাহী মিনা।
কনস্যাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা এ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্তী জননেএী শেখ হাসিনার বানী পাঠ করেন এবং একাওুরে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির কি করনীয় সে বিষয়ে আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ মনোয়ার হোসেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে জেনোসাইড বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা করেন এবং জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে “আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবসের তাৎপর্য ও একাওোরে বাংলাদেশে সংঘঠিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি” শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন-ডঃ প্রদীপ রঞ্জন কর। তিনি  তার বক্তব্যে এই দিবসের তাৎপর্য উল্লেক করে বলেন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ এবং ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সার্বজনীন মানবধীকার সনদ গৃহীত হওয়ার পাশাপাশি  জাতিসংঘ প্রনয়ন করে জেনোসাইড কনভেনশন। এই কনভেনশনে ১) জেনোসাইড সজ্ঞায়িত হয় এবং ২) জেনোসাইড শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত হয়। জেনোসাইড সজ্ঞায়িত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার ৬৭ বছর পর  ২০১৫ সনে ৬৯ তম সাধারন অধিবেশনে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে স্বীকৃতি দিল আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস। জাতিসংঘ দিবসটি ঘোষণার পর থেকেই জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, ইউএসএ প্রতি বছর দিনটি পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকাতায় আজকের এই অনুষ্ঠান।
ডঃ কর আরো বলেন এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল- ১) গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা, ২) গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা, ৩) এটি জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের নিজ জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব আছে, ৪) গণহত্যার উস্কানি বন্ধ করা ও গণহত্যা ঘটলে তা প্রতিরোধ করা।
জেনোসাইডের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট অনুযায়ী তাই একাওুরে বাঙ্গলীদের উপর পাকিস্থান সেনা বাহিনী ও তাদের দোসড়দের যে অ্যাট্রোসিটি’ বা ‘নির্মমতা’ তা ছিল এক নজিরবিহীন জেনোসাইড। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দলিলপত্রেও বলা হয়েছে যে স্মরণকালের ইতিহাসে নৃশংসতম জেনোসাইডের একটি হল ১৯৭১ বাংলাদেশের জেনোসাইড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের চালানো জেনোসাইড অন্যতম বড় জেনোসাইড। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো একাওুরে সংঘটিত এত বড় জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই অনীহা ও ব্যর্থতার ফলে বিশ্বে একের পর এক জেনোসাইড  অব্যাহত রয়েছে।
নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনায় আরও অংশগ্রহন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী , বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসাইন , বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আবদুল বাতেন, ক্যাপ (অবঃ) আবু বক্কর,  বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চৌধুরী , বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী বশিরউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাবেক আইন সম্পাদক এডভোকেট শাহ মো: বখতিয়ার, সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক করিম জাহাঙ্গীর, সাবেক নির্বাহী সদস্য শরিফ কামরুল হিরা , মমতাজ শাহনাজ, আকতার হোসেন, সাদেকুল বদরুজামান, সিরাজুল ইসলাম সরকার,  যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা মঞ্চের সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ জামাল হোসেন,  কৃষিবিদ সৌমেন সাহা ও কামাল প্রমুখ।
সেমিনারে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার নিন্মক্তো সুপারিশ গ্রহন করা হলো:
১) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ বেশ দীর্ঘ হতে পারে। সে কারনে জেনোসাইড আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য স্বপ্ল ও দীর্ঘ মেয়াদী একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা।
২) একাওুরের গণহত্যার ভয়াবহতা ও নৃশংসতা সম্পর্কে দেশে বিদেশে ব্যাপক জনমত তৈরী এবং এ উদ্দ্যেশে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে “বাংলাদেশ জেনোসাইড স্টাডিজ” অন্তরভূক্ত করা।
৩) একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি  আদায়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার উদ্দ্যেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহ  দেশের পথিতদশা জেনোসাইড বিশেযজ্ঞদের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও বাজেটসহ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন শক্তিশালী জাতীয় কমিটি বা সেল গঠন করা।
৪) দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন উৎস হতে একাওুরের জেনোসাইডের নানাবিধ দালিলিক প্রমাণগুলো সংগ্রহের মাধ্যমে একটি ডকুমেণ্ট প্রণয়ন করা। যাতে জেনোসাইডের যাবতীয় যথার্থ তথ্যচিত্র ছাড়াও তার সঙ্গে অডিও-ভিডিও সহ সাক্ষ্য সংযোজন থাকা আবশ্যক।
৫) হলোকস্ট ডিনাইল আইনের ন্যায় দেশে একটি আইন প্রনয়ন করা প্রয়োজন। যাতে জেনোসাইডের  প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্ট  নিয়ে বিতর্ক তুলতে না পারে।
৬) কুটনীতিক পদক্ষেপ- প্রথমে বন্ধুপ্রতিম দেশসমুহের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ জেনোসাইডের স্বীকৃতির আদায়। বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের স্বীকৃতি আদায়ের পর সব দেশগুলো সম্মিলিত  ভাবে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে স্বীকৃতির বিষয়টি উত্থাপিত  করা।
৭) জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাওয়ার পাশাপাশি এই গণহত্যার মূল নায়কদের ও ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনাদের বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা।
৮) একাত্তরের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে জেনোসাইডকে ইতিহাসের বিষয়ে পরিণত করা।
৯) যেখানে জেনোসাইড সেখানেই প্রতিরোধ এই নীতি গ্রহনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।
১০) মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান যে নির্যাতন বন্ধ ও বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীদের স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে দেশে ফেরৎ পাঠানোর ব্যাপার আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877